গ্রামীন নারী সমাজের উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণের ভুমিকা
প্রথম অধ্যায়
ভূমিকা
১.১ বিষয়ের প্রেক্ষাপটঃ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেভাবে দুর্দশা গ্রস্ত মানুষের সহায়তার লক্ষ্যে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা বা ‘ক্ষুদ্র ঋণের’র জন্ম হয়েছে, সেভাবে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের পর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্যকিছু সংখ্যক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে নানান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেন। বিশ্বে অবশ্য আনুষ্ঠানিক অবয়বে প্রকাশিত এধরনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সারা বিশ্বেই মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেবিকশিত হতে শুরু করে। উপমহাদেশে একদা মুসলিমদের জন্য ওয়াকফ্ আইন এবং হিন্দুদের জন্য দেবোত্তর আইনে যে প্রাতিষ্ঠানিক স্বেচ্ছাসেবী কার্যμমশুরু হয়েছিল, তারই হাত ধরে আজকের ‘ক্ষুদ্র ঋণের’ কার্যক্রমের বিকাশ।
প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলো তাদের কাজ ত্রাণ ওপুণর্বাসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেও, পরবর্তীকালে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে তাদেরকর্ম পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। এদেশের স্বেচ্ছাসেবী উনড়বয়নকর্মীরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশের পাহাড়সম সমস্যা সরকারের একারপক্ষে সমাধান করা কঠিন। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করলে, অল্প সময়েরমধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে স্বপের “সোনার বাংলা” প্রতিষ্ঠাকরা সম্ভব। সেদিনের সেই ক্ষুদ্র উদ্যোগই পরবর্তীকালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা ক্ষুদ্র ঋণের-তে রূপ লাভ করে, যা আজ একটি প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় বৃহৎ উন্নয়ন সেক্টর হিসেবে সর্বজন-স্বীকৃত।
এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে সক্রিয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার বা ক্ষুদ্র ঋণের’র সংখ্যা দুই-আড়াই হাজারের মতো হবে। নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত হাজার হাজার সংগঠন সারা বাংলাদেশে বিস্তৃত থাকলেও দাতারা সাধারণত ক্ষুদ্র ঋণ বলতে সরকারের ‘ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক ব্যুরো’ কর্তৃক নিবন্ধিত সংস্থা সমূহকে বোঝান।
সাধারণত সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, সাব-রেজিস্ট্রার, যুব উন্নয়ন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ইত্যাদিসরকারি সংস্থা থেকে নিবন্ধন নিয়ে দেশে অনেকেই কাজ করছেন। অনেকে আবারনিবন্ধন না নিয়েও কাজ করছেন। দীর্ঘ ৪ দশকের ক্ষুদ্র ঋণের কার্যμম জাতীয় উনড়বয়নেরলক্ষ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রামীণ উদ্যোগগুলোকে টেকসই করার জন্য বিশেষগুরুত্ব আরোপ করেছে। এরমধ্যে, জাতীয় জীবনে নারী-পুরুষের সম-অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি ও দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরিতে অবদান রাখা ক্ষুদ্র ঋণের-দের মূল ফোকাসে চলে আসে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সমূহের এসব উদ্যোগ জাতীয় উন্নয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাবেও স্বীকৃতি লাভ করেছে। দেশেরক্ষুদ্র ঋণের কর্মকা-ের একটি বড় দুর্বল দিক হলো ক্ষুদ্র ঋণের সেক্টরের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। দেশ ব্যাপী ক্ষুদ্র ঋণের’র কর্মকা- মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণ ও ক্ষেত্রবিশেষে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে থাকে ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়ক ব্যুরো। তবে, ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়কব্যুরো শুধুমাত্র বৈদেশিক অনুদান প্রাপ্ত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সমূহেরকাযক্রম মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণ ও তদারকি করে থাকে। এর বাইরে স্থানীয় সম্পদ আহরণের মাধ্যমে অনেক ক্ষুদ্র ঋণের কাজ করে থাকে। এসব সংস্থা সাধারণত তাদেরকার্য ক্রমের জন্য নিবন্ধন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ, সংশিষ্ট দাতা সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসনের নিকট দায়বদ্ধ এবং তারা তাদের কাযক্রম মনিটরিং কওে থাকে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম সমন্বয় ও মনিটরিং করলেও তারা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী রুটিন কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণের-দের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হ’লে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
১.২ সমস্যার বিবৃতিঃ
আমাদের দেশ গ্রাম ও কৃষি নির্ভর এবং জনসংখ্যার ৭৭% এখনও গ্রামে বসবাস করে। গ্রামীণ জীবনের উন্নয়নের সার্র্বিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এদেশের ঋণ ব্যবস্থায় যেমনি গরীবের প্রবেশাধিকার নেই তেমনি আবার সুদভিত্তিক ঋন ব্যবস্থায় রয়েছে নানা ধরনের শোষন ও জুলুম। অন্যদিকে সুদভিত্তিক ঋন ব্যবস্থায় সমাজে ব্যাপক বৈষম্যসৃষ্টি হয়। এছাড়াও ঋণ বিতরনে শহর ও গ্রামের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক বৈষম্য। প্রাতিষ্ঠানিক ঋনের ৮০-৯০% ভাগ পায় শহরের পুঁজিপতি এবং অধিকাংশ জনগণ মাত্র বাকী ১০% পায়। গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষকদেরকে এখনও মহাজনের উপর নির্ভর করতে হয়।এনজিওরা দারিদ্র বিমোচনে বহু প্রশংসা পেলেও তারা মাত্র ১০-২০% ভূমিহীনকে ঋণ প্রদান করতে পেরেছে এবং গ্রামের মহাজনদের তুলনায় এনজিও গুলোর শোষনও কম নয়। এরা মূলত নব্য মহাজন। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর সুদ নামক ধ্বংসাত্মক ব্যাধির মাধ্যমে সমাজের পুঁজি, পুঁিজপতিদের পকেটেই চলে যাচ্ছে। গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র ঋণঋণের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ন। ঋণ প্রদানের জন্য পুঁিজর সরবরাহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের পল্লীর ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষী এবং গরীব মানুষরা এখনও প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুযোগ-সুবিধাথেকে বঞ্চিত। বর্তমানে প্রায় দেড় হাজারের কাছাকাছি এনজিও ক্ষুদ্র ঋণকার্যক্রম চালু করেছে। কিন্তু এদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হলেও দেশের ভূমিহীনদের মাত্র ১০-১২% তাদের ঋণের সুযোগ পেয়েছে। পূর্বে মহাজনেরা ক্ষুদ্র ঋণঋণের অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করত। বিপুল সংখ্যক এনজিও গড়ে উঠলেও মহাজনের ভূমিকা এখনও তেমন একটা হ্রাস পায়নি। মহাজনের সুদের হার বেশী এবং এনজিওদেওর একেবারে কম নয়। এনজিওরা মূলত মহাজনের স্থান দখল করতে চাচ্ছে। এনজিও ওমহাজনের শোষন থেকে বাঁচতে হলে সুদবিহীন এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারন প্রয়োজন। ব্যাংক, মহাজন, জোতদার, এনজিও সবাই মিলে পল্লীকে শোষনের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন । সেবামূলক মনেবৃত্তি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও ক্ষুদ্র ঋণ উন্নয়নে কখনই সম্ভব হবে না।
১.৩ গবেষণার উদ্দেশ্যঃ
প্রতিটি গবেষনার কতিপয় উদ্দেশ্য থাকে। উদ্দেশ্যবিহীন কাজ অর্থহীন। বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ নিয়ে প্রতিটা দেশের ন্যায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো গঠিত হয়। সমাজ গবেষণার ন্যায় একটি দুরুহ কাজ করার মৌলিক উদ্দেশ্য হল সমাজ ও তার অবস্থাা সম্পর্কে জানা। গবেষণার উদ্দেশ্য নিরুপন করা অত্যন্ত কঠিন। আমার গবেষণার উদ্দেশ্য নি¤œরুপঃ
গ্রামীন মহিলাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পর্যালোচনা করা।
গ্রামীন মহিলাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অবগত হওয়া।
ক্ষুদ্র ঋণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা।
ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাাগুলোর কার্যক্রম আলোচনা করা।
গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উনড়বয়নে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাাগুলোর ভূমিকা পর্যালোচনা করা।
ক্ষুদ্র ঋণ গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখছে তা বিশ্লেষণ করা।
গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাাগুলোর করণীয় আলোচনা করা।
দ্বিতীয় অধ্যায়
ধারণাগত বিষয়াদি
২.১। প্রত্যয়গতসমূহের সংজ্ঞা ঃ
প্রতিটি গবেষণা পরিচালনা করার জন্য প্রত্যয়ের উপর অত্যাধিক জোর দিয়ে থাকেন। প্রত্যয় হল বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তি। “গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উনড়বয়নে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা” শীর্ষক গবেষণা কর্মটির প্রত্যয়সমূহ হলোঃ
১. আর্থ-সামাজিক অবস্থাা
২. উন্নয়ন
৩. আর্থ-সামাজিক অবস্থার উনড়বয়ন
৪. ক্ষুদ্র ঋণ
২.১.১। আর্থ-সামাজিক অবস্থা
সাধারণত, একটি সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থাাকে আর্থ-সামাজিক অবস্থাা বলে।
২.১.২। উন্নয়ন
সাধারণত, যে কোন ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনকে উন্নয়ন বলে। অর্থনীতির ভাষায়, কোনো মানুষের সামগ্রিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তনকে উন্নয়ন বলা হয়।
২.১.৩ আর্থ-সামাজিক অবস্থার উনড়বয়ন
সাধারণত, কোনো অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থাার উনড়বয়নকে আথ-সামাজিক উনড়বয়ন বলে।
Socio-economic development is the
process of social and economic development in a society. Socio-economic
development is measured with indicators, such as GDP, life expectancy, literacy
and levels of employment. Changes in less-tangible factors are also considered,
such as personal dignity, freedom of association, personal safety and freedom
from fear of physical harm, and the extent of participation in civil societz.
২.১.৪: ক্ষুদ্র ঋণঃ যা যা আজ একটি প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় বৃহৎ উন্নয়ন সেক্টর হিসেবে সর্বজন-স্বীকৃত। এই নিবন্ধে তিনি ক্ষুদ্র ঋণের ইতিহাস তুলে ধরলেও তিনি এর ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো দিকই তুলে ধরেন নি। ১,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রদত্ত জামানতবিহীন স্বল্প পরিমাণ ঋণকে ক্ষুদ্র ঋণ বলে। এ ঋণ প্রধানত কর্মসংস্থান ও আয় সৃষ্টিকারী কাযক্রম আরম্ভ করার উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা তজ্জাতীয় কর্মসূচি এবং ব্যাংক ও প্রচলিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দরিদ্র জনগোষ্ঠীরমধ্যে যারা আধা একরের চেয়ে কম জমির মালিক তাদেরকে প্রদান করা হয়।ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ (এমএফআই) দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ অর্থসংস্থানের বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের আয় ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতেসহায়তা করে থাকে।
২.২ সংশ্লিষ্ট গবেষণার সাহিত্য পর্যালোচনাঃ
“গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা” শীর্ষক গবেষণা কর্মটি করার জন্য বিভিনড়ব গবেষণা , গ্রন্থ, ইন্টারনেট, পত্রিকা পর্যালোচনা করা হয়। যেহেতু গবেষণার বিষয়টি সম্পূর্ণ নতুন এবং এ বিষয়ে পূর্ণঙ্গ গবেষণার ফলাফল প্রায় দূর্লভ এবং শ্রম সাপেক্ষে। তাই এই সমস্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে বিভিন্ন গ্রন্থ, পাঠ্যপুস্তক, ইন্টারনেট ও বিগত বছরগুলোর পেপার পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য সমূহ সংগ্রহ করা হয় গবেষণা ক্ষেত্রে উপরোক্ত উৎস সমূহ পর্যারোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংশ্লিষ্ট গবেষণার গ্রন্থ এবং পত্রিকা পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রাপ্ত বিষয় সমূহের সারাংশ নি¤েœ উপস্থাাপন করা হলোঃ-
২.২.১ ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের ইতিহাস
ফাতেমা বিনতে হাসনাত তার একটি অনলাইন নিবন্ধে লিখেন যে, (সুত্রঃ সবংভরঃ.ড়ৎম) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেভাবে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তার লক্ষ্যে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা বা ‘ক্ষুদ্র ঋণের’র জন্ম হয়েছে, সেভাবে বাংলাদেশেও ১৯৭১ সালের পরযুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্যকিছু সংখ্যক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে নানান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেন। বিশ্বে অবশ্য আনুষ্ঠানিক অবয়বে প্রকাশিত এধরনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সারা বিশ্বেই মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেবিকশিত হতে শুরু করে। উপমহাদেশে একদা মুসলিমদের জন্য ওয়াকফ্ আইন এবং হিন্দুদের জন্য দেবোত্তর আইনে যে প্রাতিষ্ঠানিক স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, তারই হাত ধরে আজকের ‘ক্ষুদ্র ঋণের’ কার্যক্রমের বিকাশ। প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলো তাদের কাজ ত্রাণ ও পুণর্বাসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেও, পরবর্তীকালে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে তাদেও কর্ম পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। এদেশের স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন কর্মীরা বুঝতেপেরেছিলেন যে, সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশের পাহাড়সম সমস্যা সরকারের একারপক্ষে সমাধান করা কঠিন। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করলে, অল্প সময়ের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে স্বপের “সোনার বাংলা” প্রতিষ্ঠাকরা সম্ভব। সেদিনের সেই ক্ষুদ্র উদ্যোগই পরবর্তীকালে বেসরকারি উন্নয়নসংস্থা বা ক্ষুদ্র ঋণের-তে রূপ লাভ করে,
২.২.২ ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম
তানজিল আহমেদ জনি, এশিয়ান ইউনির্ভাসিটি, অর্থনীতি বিভাগতার একটি অনলাইন নিবন্ধে লিখেছেন যে, গ্রামীন জনগনের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য যে ঋণ প্রদান করা হয় তাকে ক্ষুদ্র ঋণ বলে। পল্লীর কৃষি, মৎস্য চাষ, কুটির শিল্প, পশুপালন, ব্যবসা-বানিজ্য এবং কৃষি পণ্যের সংরক্ষন ও বাজারজাত করনের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ক্ষুদ্র ঋণ সরবরাহকরা হয়। বর্তমানে বহুসংখ্যক এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম গ্রহন করেছে। এছাড়াও স্থানীয় সরকার, ত্রান ও দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা, সমাজকল্যাণ ও মহিলাবিষয়ক ও যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় থেকেও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হয়।
কিন্তু এই নিবন্ধে তিনি ক্ষুদ্র ঋণের ইতিহাস তুলে ধরলেও তিনি এর ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো দিকই তুলে ধরেন নি।
তৃতীয় অধ্যায়
তথ্যসমূহ
৩.১। তথ্যের প্রকৃতিঃ
কোনো কিছু অনুসন্ধান করার পদ্ধতি হিসাবে গবেষণা কথাটি ব্যবহৃত তয়। মূলত কতিপয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরন করে জ্ঞান অনুসন্ধানের পদ্ধতি হচ্ছে গবেষণা। এরুপ অনুসন্ধানে বৈজ্ঞানিক নীতিমালা অনুসরন করে জ্ঞান অনুসন্ধানের পদ্ধতিই গবেষণা। গবেষণা কোনো বিষয়ের নতুন দিক উন্মচন করে নতুন জ্ঞান যোগ করে এবং প্রচলিত জ্ঞানের সত্যতা যাচাই করে। গবেষণার সাহয্যে কোনো বিষয়ের ব¯‘নিষ্ট অধ্যায়ন সম্ভব। এ প্রক্রিয়ার সাহায্যের সঠিক তথ্য সংগ্রহ তথ্যের বিশ্লেষন এবং অনুমান যাচাই করা হয়।
৩.১.১। গবেষণা কীঃ
কোনো কিছুর অনুসন্ধান করার পদ্ধতি হিসাবে গবেণা কথাটি ব্যবহৃত হয়। মূলত কতিপয় সুনির্দিষ্ট নীতিমাল অনুসরন করে জ্ঞান অনুসন্ধারনের পদ্ধতিই হচ্ছে গবেষণা। এরুপ অনুসন্ধানে বৈজ্ঞানিক নীতিমালা অনুসরন করে জ্ঞান অনুসন্ধানের পদ্ধতিই গবেষণা। গবেষণা কোনো বিষয়ের নতুন দিক উন্মোচন করে নতুন জ্ঞান যোগ করে এবং প্রচলিত জ্ঞানের সত্যতা যাচাই করে। গবেষণার সাহায্যে কোনো বিষয়ের বস্তুনিষ্ঠ অধ্যায়ন সম্ভব।
গধৎৎু ঊ. গধপফড়হধষফ বলেছেন “গবেষণা এমন একটি সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান যার উদ্যেশ্য প্রচলিত জ্ঞানের সাথে বোধগম্য ও যাচই যোগ্য জ্ঞান যোগ করা।
৩.১.২। সামাজিক গবেষণা কীঃ
সম্প্রতি সামাজিক গবেষণা কথাটিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার অর্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ অর্থে ওয কোনো সামাজিক বিষয়ব¯‘র বিষয়ভিত্তিক অনুসন্ধানই সামাজিক গবেষণা। এজন্য সামাজিক গবেষণাকে সামাজিক বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা বলে ও অভিহিত করা হয়। মূলত বিজ্ঞান হচ্ছে একটি অনুসন্ধান পদ্ধতি।
৩.১.৩। গবেষনা পদ্ধতি কী?
গবেষণা হল সত্য অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয় যার সাধারণ অর্থ হল সত্য ও জ্ঞানের অনুসন্ধান।এর সমার্থবোধক শব্দ হল জিজ্ঞাসা, তদন্ত, অণে¡ষা, অনুসন্ধান,বিকিরণ এবং নিরুপুণ। গবেষণা হল জিজ্ঞাসার উত্তর অন্বেষণের লক্ষ্যে তদন্ত করা,তদন্তের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করা, সংগৃহীত তথ্যের বিস্তারিদ অনুসন্ধান করে জিজ্ঞাসার উত্তর বের করা। আমরা অন্যভাবে বলতে পারি যে, গবেষণা হল পুনঃসন্ধান অর্থাৎ, তুলনামূলক উনড়বত পর্যবেক্ষণ করা, ভিনড়ব প্রেক্ষিতে খোঁজা এবং বাড়তি জ্ঞানের সংযোজন করার সুশৃংখল ব্যবস্থাা। কোন নির্দিষ্ট বিষয় স¤পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহের জন্যে বৈজ্ঞানিক ও সুসসংবদ্ব অনুসন্ধান হল গবেষণা। আরবীতে একে বাহস বলা হয় যার অর্থ হল মাটির ভিতর কোন কিছু তালাশ করা,খুজে বের করা ইত্যাদি। জন ডবিউ বেষ্ট বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্বতির প্রয়োগ দ্বারা বিশ্লেষণের আরও আনুষ্ঠানিক, সুসংবদ্ব ও ব্যাপক প্রক্রিয়াকে গবেষণা বলা হয়। ম্যারি ম্যকডোনাল্ড বলেন, সুশৃংখলভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রচলিত জ্ঞানের সাথে বোধগম্য ও যাচাইযোগ্য জ্ঞানের সংযোজন হল গবেষণা।
জরিপ পদ্ধতি:
সমাজ গবেষনার ক্ষেত্রে জরিপ পদ্ধতি হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যাতে বিভিনড়ব কৌশল অবলম্বন করে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহ করা যায় । এ পদ্ধতিতে গবেষক আগেই নির্দিষ্ট করে নেন তিনি কোন নির্দিষ্ট তথ্যসমূহ সংগ্রহ করতে চান।
জরিপ পদ্ধতি সম্পর্কে ডবষষং বলেন, “অ ঝড়পরধষ ঝঁৎাবৎবু যধং নববহ ফবভরহবফ ধং ধ ভধংঃ ধরফরহম ংঃঁফু ফবধষরহম বঃযরপধষ রিঃয ড়িৎশরহম পষধংং ঢ়ড়াবৎঃু ধহফ রিঃয ঃযব হধঃঁৎব ধহফ ঢ়ৎড়নষবস ড়ভ পড়সসঁহরপধঃরড়হ.” ইধনরপ তার ঞযব চৎধপঃরপব ড়ভ ঃযব ংড়পরধষ জবংবধৎপয গ্রন্থে বলেন, ঝঁৎাবু জবংবধৎপয ঢ়ড়ঢ়ঁষধৎ ঝড়পরধষ জবংবধৎপয গবঃযড়ফ রহ ঃযব ধফসরহরংঃৎধঃরড়হ ড়ভ য়ঁবংঃরড়হহধরৎবং ঃড় ধ ংধসঢ়ষব ড়ভ ৎবংঢ়ড়হফবহঃ ংবষবপঃবফ ভৎড়স ংড়সব ঢ়ড়ঢ়ঁষধঃরড়হ”
সুতরাং জরিপ পদ্ধতি হচ্ছে নির্দিষ্ট কোন এলাকার জনগন সংখ্যাতত্ম প্রকিয়া যা ঘটনার পরিমাপ এবং ফলাফল তুলে ধরে।
সুতরাং পরিসংখ্যান পদ্ধতি উক্ত গবেষনায় জন্য যথার্থ ভূমিকা পালন করেছে।
সাক্ষাৎকার পদ্ধতি:
প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের জন্য সাক্ষাত কার একটি ব্যপক ব্যবহৃত পদ্ধতি। সাক্ষাৎকার দুই প্রকার হতে পারে ১) আনুষ্টানিক সাক্ষাৎকার এবং ২) অনানুষ্টানিক সাক্ষাতকার। এখানে আমি আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতকার গ্রহন করেছি। আমার পত্র তাদের সামনে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে উপস্থাাপন করেছি। তার পর তারা সাক্ষতকার দিয়ে বিশেষভাবে আমার গবেষনায় সাহায্য করেছে। আমার গবেষনাটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাদের কে অবহিত করেছি যার ফলে তার সঠিক তথ্য প্রদান করেছে।
পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি:
প্রাথমিকভাবে জরিপ চালানোর পর তা বিশে¬ষন করে পরিসংখ্যানের মাধ্যমে চুড়ান্ত ফলাফলের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়।
পরিসংখ্যান হলো বিভিন্ন কলা কৌশলের পদ্ধতি সমন্বয়ে এমন একটি বিকাশ যা সংখ্যা বা রাশি তথ্যটি নিয়ে পঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে।
রুনিয়ন ও কোলম্যান বলেন, ঝঃধঃরপ রং ঃযব ঢ়ৎড়পবংং ড়ভ পড়ষষবপঃরহম ফধঃধ রহ ধ ংুংঃবসধঃরপ সধহহবৎ বীধসরহরহম ঃযড়ংব ফধঃধ ধহফ সধশরহম পড়হভবৎবহপব ভৎড়স ঃযড়ংব ফধঃধ.
জন. সি বাচ পরিসংখ্যান সম্পর্কে বলেন, ঞযব হঁসবৎরপধষ ঢ়ৎড়পবফঁৎবং ঃযধঃ ঢ়যবহড়সবহধ ধষষড়ি ঃড় নব সবধংঁৎবফ ধহফ ৎবংঁষঃং পড়সঢ়ধৎবফ ধৎব পধষষবফ ংঃধঃরপ.
পরিশেষে বলা যায় যে, পরিসংখ্যান হলো সেই বা তাদের প্রতিনিধিত্বশীল অংশের বৈশিষ্ট্য, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিপার্শিক অবস্থাা সহ যে কোন বিষয়ের তথ্য গ্রহনের প্রক্রিয়া বা কৌশল।
৩.২ তথ্যের উৎস ও ব্যবহারঃ
যে কোন গবেষণার ক্ষেত্রে উৎস এবং ব্যবহার খুবই গুরুত্ত্বপর্ণ বিষয়। “গ্রামীন মহিলাদেও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণের ভুমিকা” শ র্ষীক গবেষণা কর্মটি সম্পাদন করার প্রয়োজন নানা উৎসকে তথ্যের ভা-ার হিসাবে ব্যবহার করতে হয়েছে।
৩.২.১সংখ্যাত্তক তথ্যঃ
সংখ্যাত্তক তথ্য বা উপাত্ত বলতে বোঝায় সেই ধরনের তথ্য বা উপাত্তের মিশ্রন বা সমষ্টি যা সংখ্যাকে কেন্দ্র করে নির্ভর করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অন্যভাবে বলা যায় কোন কিছু সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করাকে সংখ্যা তথ্য বলে এবং তথ্যের বর্ণনা সংখ্যাকে কেস্ত্র করে প্রকাশের মাধ্যম হল ‘‘সংখ্যাত্ম তথ্য” মাধ্যম।
৩.২.২গুনাত্বক তথ্যঃ
গুনাত্বক তথ্যবা উপাত্ত বলতে বোঝায় সেই ধরনের তথ্য বা উপাত্তের মিশ্রন বা সমষ্টি যা গুনকে কেন্দ্র করে নির্ভর করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
৩.২.৩ উপাত্তের উৎসঃ
উৎসের ভিত্তিতে উপাত্তকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
প্রাথমিক তথ্য ঃ
যে তথ্য সরাসরি সমাজের মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় তাকে প্রাথমিক তথ্য বলা হয়।
মাধ্যমিক তথ্য ঃ
বিভিন্ন কলেজ লাইব্রেরী, পাবলিক লাইব্রেরী, সংবাদ পত্র, ওয়েব সাইড হতে যে তথ্য গ্রহণ করা হয় তাকে মাধ্যমিক তথ্য বলে।
৩.২.৪ উপাত্ত সংগ্রহের কৌশল সমুহঃ
তথ্য সংগ্রহের কৌশল হিসেবে সামাজিক বিজ্ঞানে কতগুলো পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যেসব পদ্ধতি
সামাজিক বিজ্ঞানে বেশি ব্যবহৃত হয় এখানে সেগুলো দেয়া হলো:
পরীক্ষণ পদ্ধতি
পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি
সাক্ষাৎকার পদ্ধতি
প্রশ্নমালা পদ্ধতি
ঘটনা অনুধাবন পদ্ধতি
সমষ্টিগত আলোচনা
প্রক্ষেপন
নথিপত্র
চতুর্থ অধ্যায়
গবেষণার ফলাফল
৪.১ গবেষণার এলাকা পরিচিতিঃ
“গ্রামীণ মহিলাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকা-প্রেক্ষিত মনিরামপুর” এর উপর একটি সমাজতাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রে ২৫ জন উত্তরদাতার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যাবলীর মধ্যে এমন অনেক তথ্য পাওয়া গেছে যা গবেষণা বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলীকে আলাদা আলাদা সারণীর মাধ্যমে ব্যখ্যা করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
৪.২ গবেষণার পরিসংখ্যনিক বিশ্লেষণঃ
সারণী-১
(উত্তরদাতাদের বয়স সম্পর্কিত তথ্য সংক্রান্ত সারণী) বয়স উত্তরদাতার সংখ্যা শতকরা (%)
২০-৩০ ০৪ ১৬%
৩০-৪০ ০৯ ৩৬%
৪০-৫০ ০৫ ২০%
৫০-৬০ ০৪ ১৬%
৬০-৭০ ০৩ ১২%
মোট ২৫ ১০০%
উল্লেখ্য উত্তরদাতাদের বয়স ২০ বছরের উপরে এবং ২০-৩০, ৩০-৪০, ৪০-৫০, ৫০-৬০, ৬০-৭০ বছর বয়সের শিক্ষিত শ্রেণীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।
সারণী-২
(উত্তরদাতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কিত সারণী) শিক্ষাগত যোগ্যতা উত্তরদাতার সংখ্যা শতকরা (%)
মাধ্যমিক ১২ ৪৮%
উচ্চ মাধ্যমিক ০৬ ২৪%
¯œাতক ০৪ ১৬%
মোট ২৫ ১০০%
উত্তরদাতাদের মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন জনগোষ্ঠী অধিক। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক ও ¯œাতক পর্যায়ের জনগোষ্ঠী।
সারণী-৩
(উত্তরদাতাদের পেশা সম্পর্কিত সারণী) পেশা উত্তরদাতার সংখ্যা শতকরা (%)
চাকুরী ০৫ ২০%
ব্যবসা ০৪ ১৬%
শিক্ষার্থী ০৭ ২৮%
গৃহিনী ০৯ ৩৬%
মোট ২৫ ১০০%
উত্তরদাতাদের মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন জনগোষ্ঠী অধিক। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক ও ¯œাতক পর্যায়ের জনগোষ্ঠী।
উপরের সারণী থেকে উত্তরদাতাদের পেশা সম্পর্কে তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, উত্তরদাতাদের মধ্যে গৃহিনী ৯ জন, শিক্ষার্থী ৭ জন, ব্যবসায়ী ৪ জন, চাকুরীজীবি ৫ জন। যার শতকরা হার যথাμমে ৩৬%, ১৮%, ১৬% ও ২০%।
ক্ষুদ্র ঋণ ও ক্ষুদ্র ঋণের ইতিহাসঃ
প্রতি ঋণগ্রহীতাকে ১,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রদত্ত জামানতবিহীনস্বল্পপরিমাণ ঋণ। এ ঋণ প্রধানত কর্মসংস্থান ও আয় সৃষ্টিকারী কার্যক্রম আরম্ভ করার উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা তজ্জাতীয়কর্মসূচি এবং ব্যাংক ও প্রচলিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দরিদ্র জনগোষ্ঠীরমধ্যে যারা আধা একরের চেয়ে কম জমির মালিক তাদেরকে প্রদান করা হয়। ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ (এমএফআই) দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ অর্থসংস্থানের বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের আয় ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতেসহায়তা করে থাকে।দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে পরিচালিত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি সমূহ প্রধানত পল্লী এলাকায় বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ভারসাম্যহীনতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অপসারণের উদ্দেশ্যে ব্যাপক সংখ্যক ঋণ গ্রহীতাকে এরআওতায় নিয়ে আসে।
গ্রামের দরিদ্র জনগণ দীর্ঘদিন ধরে অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ওপর অধিকমাত্রায় নির্ভরশীল ছিল। গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশে বিকল্প ক্ষুদ্রঋণকাযক্রম চালু করে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে দরিদ্র মহিলাদের মধ্যেগোষ্ঠীভিত্তিক ঋণ প্রদানের একটি কর্মসূচি হিসেবে প্রথমে ক্ষুদ্রঋণকার্যক্রম আরম্ভ হয়। গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৭৬ সালে একটি পরীক্ষামূলক ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু করে। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) এবং কর্মসংস্থান ব্যাংক-এর মতো বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৮০০-এর অধিক এনজিও দেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
গ্রামীণব্যাংকের গোষ্ঠীভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ অর্থায়ন প্রকল্পের সাফল্য এবং গ্রামীণমডেলে পরিচালনাধীন বহুসংখ্যক এমএফআই বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করেছে ওমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ৪৫টিরও বেশি দেশে এ মডেলটি অনুসৃত হচ্ছে।পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ভূমিহীন পরিবার ভিত্তিক যুবগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থান এবং আয়সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের লক্ষ্যে একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০০০ সালে বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ৯ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই রয়েছে ৫ মিলিয়নেরও বেশি।
অবশ্য, বাংলাদেশ বা বহির্বিশ্বে ক্ষুদ্রঋণ নতুন কোনো বিষয় নয়। টাকা ধার প্রদানকারী বা মহাজন, অবস্থানরত প্রতিবেশী এবং আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের মতো প্রাতিষ্ঠানিক স্থানীয় উৎস থেকে স্মরণাতীতকাল থেকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের ব্যবস্থা চালু ছিল এবং এ ধরনের লেনদেনের নজির বৈদিক ভারতেও পাওয়া যায়। মূলত প্রাতিষ্ঠানিক পল্লী-ঋণ প্রদানকারী সংস্থার অনুপস্থিতির কারণে অর্থ ধার দেওয়ার এ প্রাচীন রীতি সমগ্র মুগল শাসনামলে প্রচলিত ছিল, এমনকি তা ব্রিটিশ শাসনের প্রথম দিকেও সক্রিয় ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে লোন অফিস এবং ব্যাংক-এর মতো প্রাতিষ্ঠানিক উৎস শুরু হওয়ার পূর্বপর্যন্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণদাতাদের কার্যক্রমের প্রসার অব্যাহত থাকে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক উৎসসমূহ কর্তৃক সরবরাহের তুলনায় অর্থের জন্য চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকত এবং পল্লী ও নগর উভয় এলাকার অধিকাংশ দরিদ্রমানুষের সহজে আনুষ্ঠানিক ঋণ পাওয়ার সুযোগ না থাকায় নতুন গড়ে ও ঠাপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ-উৎসসমূহ পূর্বতন অনানুষ্ঠানিক উৎসগুলিকে সম্পূর্ণ নির্মূলকরতে পারে নি।
পাকিস্তান আমলে একটি বাদে সবগুলি ব্যাংকই ছিল বেসরকারি মালিকানাধীন। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের লোকজন খুব কম ক্ষেত্রেই ব্যাংক ঋণ পেত। তখন ২২টি পরিবার ব্যাংকিংসহ দেশের সব ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত। এ সকল সমস্যা পরবর্তীকালে বড় ধরনের গণঅসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে এআশঙ্কায় সরকার ১৯৬০-এর শেষের দিকে কিছু ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু করে।এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, পাট ব্যবসায় অর্থসংস্থানের জন্য ফড়িয়া-ব্যাপারী প্রকল্প এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প। প্রথম প্রকল্পের অধীনেফড়িয়া এবং ব্যাপারীর মতো পাট ব্যবসায়ের খুচরা ব্যবসায়ীদেরকে তফশিলভুক্তব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হতো এবং ঋণের সীমা ছিল ফড়িয়াদের জন্য ১,০০০টাকা এবং ব্যাপারীদের জন্য ২,০০০ টাকা। এ ঋণগুলি ছিল জামানতবিহীন, কিন্তু নিরাপত্তা হিসেবে ব্যাংকে ব্যবসায়ের লাইসেন্স জমা দিতে হতো। দ্বিতীয় প্রকল্পের অধীনে ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান তফশিলভুক্ত ব্যাংকসমূহকে তাদের নিজস্ব ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালুকরার উপদেশ দেয়। এ ধরনের চালু কয়েকটি প্রকল্পের মধ্যে ছিল ন্যাশনালব্যাংক অব পাকিস্তানের ‘পিপলস ক্রেডিট’ (ঋণ-সীমা ২,০০০ টাকা), হাবিব ব্যাংক লিমিটেড-এর ‘শপ-কিপার্স লোন স্কিম’ (সীমা ১,০০০ টাকা) এবং ইউনাইটেডব্যাংক লিমিটেড- এর ‘স্মল লোন স্কিম’ (সীমা ১,০০০ টাকা)। এ সকল কর্মসূচি মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয় কারণ অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তারা ভূয়া নামে বড় ব্যবসায়ী এবং ফড়িয়া, ব্যাপারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদান করে। একাজে জড়িতদের অসাধুতা এবং কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রক আইনের অনুপস্থিতি ক্ষুদ্রঋণের এ ব্যর্থতাকে আরও দ্রুত ও প্রবল করে। ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার পর, সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সকলতফশিলভুক্ত ব্যাংক জাতীয়করণ করে এবং গণমুখী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রবর্তনেরলক্ষ্যে গ্রামের দরিদ্র মানুষদের সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ সেবা প্রদানেরউদ্দেশ্যে পল্লী এলাকায় ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠা করে। ছোট আকারে কৃষিঋণবিতরণের মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এবংপরবর্তীকালে রাজশাহী কৃষি উনড়বয়ন ব্যাংক (রাকাব) প্রতিষ্ঠা করে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ (এনসিবি), বিকেবি এবং রাকাবেরপ্রাতিষ্ঠানিক কাযক্রম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত থাকলেও বিধি-বিধানের কড়াকড়ি তাদের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে অদক্ষ করে তোলে। এরপরও তারা সম্মিলিতভাবে জুন ২০০০ পর্যন্ত ১,৭৯৮.৪৫ মিলিয়ন টাকা ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে বিতরণ করেছিল।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে, স্বপ্রণোদিত হয়ে বহু স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠী মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীদের খাদ্য, বস্ত্র ও নৈতিক সমর্থন প্রদানেরমাধ্যমে সাহায্য করে। এ সকল গোষ্ঠীর কয়েকটি পরবর্তীতে দেশে তাদেও পুনর্বাসন ও মানবসেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখে এবং অল্প দিনের মধ্যেইগোষ্ঠীগুলি সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নে লক্ষ্যাভিসারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।তারা বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) নামে পরিচিত হয়ে ওঠে এবং পর্যায় সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, সাক্ষরতা প্রসার, স্বাস্থ্য-সচেতনতা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে স্বকর্মসংস্থান ওআয় বৃদ্ধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারন করে। ১৯৭৬ সালেচট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার জোবরা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংক একটি প্রকল্পহিসেবে কাজ শুরু করে। এটিকে পর্যায়μমে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিকসহায়তায় ক্ষুদ্রঋণ সম্পর্কিত একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পে রূপান্তর করাহয়। গ্রামীণ ব্যাংক আইন ১৯৮৩-এর অধীনে ১৯৮৩ সালে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারীএকটি পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত ব্যাংক-এ পরিণত করা হয়।
গ্রামীণ ব্যাংক আয় বৃদ্ধি এবং সম্পদ সৃষ্টিমূলক কার্যক্রমের লক্ষ্যে একটি বড় জনগোষ্ঠীকে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে থাকে। এটি এর সদস্যগণকে গৃহনির্মাণ ঋণও প্রদান করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণকার্যক্রম উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ ব্যাংকটির ঋণবিতরণের পরিমান দাঁড়ায় ৯১.৯ বিলিয়ন টাকা যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায়প্রায় শতকরা ২৮ ভাগ বেশি। গ্রামীণ ব্যাংক বর্তমানে ৪৫ হাজারেরও বেশিগ্রামে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে এ ব্যাংকটির ৯০হাজারেরও বেশি ঋণ সুবিধাভোগীই মহিলা। বাংলাদেশে গ্রামীণ-এর গোষ্ঠী ভিত্তিকপদ্ধতি অনুসরণকারী বড় ধরনের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারীদের মধ্যে আছে একমিলিয়নেরও অধিক সদস্যবিশিষ্ট একটি এনজিও ব্র্যাক এবং প্রায় ৫ লক্ষসদস্যের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ‘থানা সম্পদ উন্নয়ণ ও কর্মসংস্থান প্রকল্প’ (থারডেপ) বাস্তবায়নকরছে, যা এর লক্ষ্যগোষ্ঠীকে সংগঠিত করারজন্য পরিবারভিত্তিক পদ্ধতিতেক্ষুদ্রঋণ সরবরাহ করছে। এনজিওদের পরিচালিত দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি সমূহে তারা তাদের লক্ষ্যগোষ্ঠী নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে লিঙ্গ (যথা, গ্রামীণ ব্যাংক), পেশা (যথা, ব্র্যাক) অথবা সংখ্যাগত পরিমাণ (যথা, বিআরডিবি) ইত্যাদি বিবেচনা করে। গোষ্ঠীভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের অধীনে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ গ্রহণের উপযুক্ত হওয়ার জন্য পাঁচ জনের এক একটি দল গঠন করতে হয় এবং তাদের নিজেদেও সঞ্চয় সংগ্রহ করতে হয়। সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সংগৃহীত এ সঞ্চয়ের পরিমাণপ্রতি সপ্তাহে সদস্যপ্রতি এক থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।গোষ্ঠীভিত্তিক এবং পরিবারভিত্তিক লাভজনক উপার্জনমুখী কার্যক্রম চিহ্নিত করণে প্রশিক্ষণ, উৎপাদন ও বিপণন সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীর মধ্যে এক ধরনের দায়িত্বে বাধ জাগ্রত করার জন্য এ সকল কার্যক্রম প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অধিক লেনদেন ব্যয়ের কারণে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি সমূহ ভর্তুকি-সমর্থিত সম্পদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। বিশেষত, এমএফআইসমূহেরপ্রদত্ত ঋণের ওপরে ধার্যকৃত সুদহার হয় প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ-উৎসগুলিরসুদহারের সমপর্যায়ের বা তার চেয়েও বেশি। মৌলিক দক্ষতা উন্নয়নের মতো সহায়ক সেবাও প্রদান করে থাকে। অন্যান্য সহায়ক সেবার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সামাজিক সচেতনতা, পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবংপরিবেশ সচেতনতা কার্যক্রম
বিআরডিবি বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রেসরকারি খাতের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান। এটি ঋণ, দক্ষতা উনড়বয়ন, পরিবারপরিকল্পনা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য সামাজিক উনড়বয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পল্লীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য তাদেরকে সমবায় এবং অনানুষ্ঠানিক দল গঠনের মাধ্যমে সংগঠিত করে। এদের লক্ষ্যগোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ০.৫ একর পর্যন্ত জমির মালিক ক্ষুদ্র কৃষক এবং বিত্তহীনমহিলা ও পুরুষ। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) ক্ষুদ্র ঋণকার্যক্রম ২০১০ সালেও অব্যহত রয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহ এ ঋণবিতরণ ও আদায়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে থাকে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এই ঋণবিতরণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮,৩৭৫.৮৪ কোটি টাকা। বিআরডিবি’র ঋণ আদায়ের হারশতকরা ৯৪ ভাগ। মূলত প্রশিক্ষণ এবং প্রায়োগিক গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠিতবাংলাদেশ পল্লী উনড়বয়ন একাডেমী (বার্ড) এবং বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ)-এই প্রতিষ্ঠান দুটিও ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। ১৯৯৮সাল পর্যন্ত এ দুটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিতরণকৃত মোট ঋণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৯২০ মিলিয়ন টাকা এবং ৩৫ মিলিয়ন টাকা, তাদের আদায়ের হার ছিল৯৮%। অন্য যে সকল সরকারি সংস্থা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলিহচ্ছে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়, দপ্তর এবং দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যেবিশেষভাবে গঠিত কিছু সংস্থা। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন একাই অংশীদারপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সংযুক্ত ২৫৭টি এনজিও-র মাধ্যমে প্রায় ৮৫ লক্ষ গ্রহীতাকেক্ষুদ্রঋণ সরবরাহ করেছে। কিছু সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৭৬-২০০০ মেয়াদে ৩৬৩টিএনজিও (এমএফআই)-এর মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারী সকল সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৫মিলিয়ন অতিক্রমত করে যায়। ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত এ ঋণ গ্রহীতার সংখ্যাপ্রায় ১৫ মিলিয়ন। যে সকল কার্যক্রমের জন্য ক্ষুদ্রঋণ মঞ্জুর বা ব্যবহারকরা হয়, সেগুলি হচ্ছে প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য, পল্লী পরিবহণ, ক্ষুদ্র উদ্যোগ ওব্যবসায়, গৃহনির্মাণ, গ্রামীণ বনায়ন, হাঁসমুরগি পালন, সেবা এবং অন্যান্যঅকৃষি স্বকর্মসংস্থান ও উপার্জনমুখী বিভিনড়ব জীবিকা। যে সকল আইনের অধীনেক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী এনজিও নিবন্ধন করা হয় সেগুলি হচ্ছে সোসাইটিজরেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট ১৮৬০, কোম্পানি অ্যাক্ট ১৯৯৪, কো-অপারেটিভ সোসাইটিজঅ্যাক্ট ১৯৮৪, চ্যারিটেবল আ্যন্ড রিলিজিয়াস ট্রাস্ট অ্যাক্ট ১৯২০, এবং ট্রাস্ট অ্যাক্ট ১৮৮২। বিভিনড়ব বিদেশি উৎস থেকে অনুদান গ্রহণেচ্ছুএনজিওসমূহকে ফরেন ডোনেশন্স (ভলান্টারি অ্যাক্টিভিটিজ) রেগুলেশনঅর্ডিন্যান্স ১৯৭৮-এর অধীনে এনজিও-বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধন করা হয়।
এমএফআইসমূহের ঋণ লেনদেনের একটি ব্যয় রয়েছে। ঋণগ্রহীতা চিহ্নিতকরণ ওনির্বাচন এবং ঋণ আদায়ের উঁচু হার সংরক্ষণের মতো জটিল কার্যক্রম পরিচালনার ব্যয়ও যথেষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, গোষ্ঠীভিত্তিক ঋণ প্রদান করতে সামাজিকমধ্যস্থতা, দল গঠন, প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য ঋণবহির্ভূত কার্যক্রম প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, দরিদ্ররা সঞ্চয় করতে পারে, তারা ঋণ পাওয়ার যোগ্য এবং তাদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় মহিলা ঋণগ্রহীতাগণ কম ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের কর্মসূচি অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসথেকে উচ্চহার সুদে ধার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে এবং দরিদ্রদেরঅর্থায়নের পথ সুগম করেছে। ক্ষুদ্রঋণ এ অর্থে সঠিক লক্ষ্যাভিসারী, সমাজথেকে পর্যায়ক্রমে দারিদ্র্য দূর করাই তার প্রকৃত লক্ষ্য। ২০০৯ সাল পর্যন্তবাংলাদেশে বিতরণকৃত মোট ক্ষুদ্রঋণের মধ্যে ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষিরাপেয়েছে ৭৪%, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের চাষিরা পেয়েছে ২২% এবং বড় চাষিরা পেয়েছে মাত্র ৪%। পক্ষান্তরে, ব্যাংকসমূহ কর্তৃক সরবরাহকৃত ঋণের মধ্যে বড় (২.৫% একরের অধিক ভূমির মালিক) চাষিদের অংশ ছিল আনুমানিক ৮৫%, ক্ষুদ্র ওমাঝারি আকারের (০.৫ একরের বেশি কিন্তু ২.৫ একরের কম ভূমির মালিক) চাষিরাপেয়েছে ১৩% এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা পেয়েছে মাত্র ২%।
ক্ষুদ্র ঋণের বৈশিষ্ট্যঃ
১. অপ্রতুলতা:
জনসংখ্যার ৭৭% পল্লী এলাকায় বসবাস করলেও সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুবিধাএখনও প্রয়োজনের তুলনায় কম। মোট ঋণের প্রয়োজনের ২০% মাত্র পূরন করা সম্ভবহচ্ছে বলে অনুমান করা হয়।
২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
এ দেশে বন্যা, খরা, ঝড় প্রায় বছরই হতে দেখা যায়। এ সমস্ত কারনে কৃষকদের পক্ষে ঋণ গ্রহন করা ও পরিশোধ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
৩. মূল্য হ্রাসজনিত ঝুকি:
মূল্য বৃদ্ধি পেলে কৃষি দ্রব্যের বিμি মূল্য বেড়ে গিয়ে মুনাফা বৃদ্ধি পায়কিন্তু মূল্য হ্রাস পেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ঋন পরিশোধের সমস্যায়পতিত হয়।
৪. টাউট বাটপারদের দৌরাতড়ব:
গ্রাম এলাকায় কৃষকরা অশিক্ষিত বিধায় প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ গ্রহনের ক্ষেত্রেগ্রামের টাউট বাপদারদের খপ্পরে পড়ে যায়। ফলে ঋণের সম্পূর্ন টাকা ঋণ গ্রহীতাপায় না।
৫. কর্মচারীদের সংখ্যা স্বল্প:
পল্লী ঋণে নিয়োজিত কর্মচারীর সংখ্যার তুলনায় ঋণ গ্রহীতাদের সংখ্যা অনেকবেশি। ফলে স্বল্পসংখ্যক কর্মচারী দিয়ে ঋণ বিতরন ও আদায়ে ভাল ভূমিকা রাখারসম্ভব হয়ে উঠে না।
৬. ঋনের অপব্যবহার:
পল্লী এলাকায় ঋণ গ্রহনকারীরা প্রায়ই ঋণের অপব্যবহার করে থাকে। ফলে ঋণ আদায় করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
৭. ঋণ পরিশোধে অনিহা:
আমাদের গ্রামের লোকেরা ঋণকে বৈদেশিক সাহায্য বা অনুদান হিসেবে মনে করে।আবার ঋণ মওকুফের সংস্কৃতিও গড়ে উঠেছে বলে গ্রামীণ ঋণ গ্রহনকারীরা মনে করেযে, ঋন নিলে তা আর দিতে হবে না। ১৬
৮. ঋণ গ্রহনকারীদের অজ্ঞতা:
অধিকাংশ পল্লীর জনগন অশিক্ষিত ও অজ্ঞ বলে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণে তারা অভ্যস্তনয়। তারা ঋণের শর্ত ও পরিশোধের সময় সম্পর্কে না জেনেই ঋণপত্রে স্বাক্ষর বাটিপসই প্রদান করে থাকে।
৯. ঋণের খরচ বেশি:
ক্ষুদ্র ঋণের খরচ বেশী যা সাধারণত শতকরা ৪০% পযর্ন্ত হতে দেখা যায়।প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারী থেকে শুরু করে গ্রামের মেম্বারচেয়্যারম্যান পযর্ন্ত অবৈধ খরচ এবং ঋণের জন্য শ্রম দিন হিসাবে ধরলে ঋণেরখরচ ( ঋণ প্রাপ্তির খরচ ) ৪০% এরও বেশি হয় ( ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে )।
১০. ঋণ দান পদ্ধতি:
গ্রামীন ঋণ দান পদ্ধতি জটিলতাপূর্ণ এবং এর দীর্ঘ সূত্রিতাও কম নয়। উপজেলাভূমি অফিস থেকে পর্চার কপি সংগ্রহ, মেম্বার চেয়্যারম্যানের স্বাক্ষরসংগ্রহ, ছবি তোলা, আবেদনপত্র সংগ্রহ ইত্যাদি কাজে অনেক সময় লেগে যায়।
ক্ষুদ্র ঋণের প্রকারভেদ:
প্রয়োজনের দিক থেকে ক্ষুদ্র ঋণকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. খামারজাত ঋণ:
কৃষি খামার: কৃষি উৎপাদন সামগ্রী যথা বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ যন্ত্র, শ্রমিকের মজুরী ইত্যাদির জন্য ঋণ প্রয়োজন।
মৎস্য খামার: পুকুর খনন, পুনঃখনন, জাল, চুন, সার ইত্যাদির জন্য ক্ষুদ্র ঋণের প্রয়োজন রয়েছে।
গবাদি পশু ও হাঁস মুরগীর খামার: গরু ছাগল, হাঁসমুরগী μয়ের জন্যঋণের প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে ঘর তৈরী, যন্ত্রপাতি ও পশু খাদ্যের জন্য ঋণেরপ্রয়োজন দেখা দেয়।
২. অখামারজাত ঋণ:
বাজারজাতকরণ ও গুদামজাতকরণ: উৎপাদন মৌসুমে ফসলের নি¤ড়বমূল্যে থাকেবিধায় গুদামজাত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। গুদাম, কোল্ডস্টোরেজ ইত্যাদিনির্মাণের জন্য এবং কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণে ঋণের প্রয়োজন হয়।
কুটির শিল্প: কুটির শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ঘরতৈরীর জন্য ঋণের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও কুটির শিল্পের দ্রবাদি বাজারজাতকরণেরজন্য ঋণের প্রয়োজন হয়।
পল্লী পরিবহন: রাস্তাঘাটের উনড়বতির সঙ্গে পরিবহন ব্যবস্থাও উনড়বতহচ্ছে। রিক্সা, ভ্যান, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ইত্যাদিও জন্য ঋণ আবশ্যক।
ক্ষুদ্র ব্যবসা: গ্রামের লোকেরা ধান-চালের ব্যবসা ও দোকানদারী ইত্যাদি কাজে ঋণ গ্রহন করে থাকে।
পল্লী গৃহ নির্মাণ: পল্লী এলাকায় স্বল্প সুদে গৃহ নির্মাণ বা ইমারত তৈরির জন্য ঋণের প্রয়োজন হয়।
৪.৪ ক্ষুদ্র ঋণের উৎস:
ক্ষুদ্র ঋণের উৎস বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রাম এলাকায় পূর্বের মত এখন আরমহাজন নেই। এখনকার মহাজনরা হচ্ছে জোতদার, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী শ্রেণী।প্রাতিষ্ঠানিক উৎস সমূহও বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংক ও সমবায় সমিতি সমূহ ছাড়াওগ্রামীণ ব্যাংকসহ বহুসংখ্যক এনজিও পল্লী অর্থসংস্থানে ভূমিকা পালন করছে।কৃষি ঋণে পূর্বে বড় কৃষক ব্যতীত ক্ষুদ্র কৃষক ও ভূমিহীনদেরকে কোন সুযোগ ছিলনা। এনজিও সমূহ এবং অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এখনও ক্ষুদ্র ঋণকার্যμম চালু হয়েছে।
ক্ষুদ্র ঋণের উৎসসমূহকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে-
ক) অপ্রাতিষ্ঠানিক
খ) প্রাতিষ্ঠানিক
ক) অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস:
ক্স গ্রাম্য মহাজন
ক্স বন্ধুবান্ধব
ক্স আত্মীয়স্বজন
ক্স ব্যবসায়ী
ক্স ধনী কৃষক
ক্স ফরিয়া ব্যাপারী
ক্স চাকুরীজীবী ও অন্যান্য
খ) প্রাতিষ্ঠানিক উৎস:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক
রাজশাহী কৃষি উনড়বয়ন ব্যাংক
ভূমি ব্যাংক
বাংলাদেশ পল্লী উনড়বয়ন বোর্ড
রাষ্ট্রয়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ
সমবায় ব্যাংক ও সমিতি
এনজিও সমূহ
সরকারের বিভিনড়ব বিভাগ
পল্লী দারিদ্র উনড়বয়ন ফাউন্ডেশন
বিভিনড়ব গবেষনায় দেখা যায় যে, গ্রামীণ ঋণের ৯০% আসে মহাজন বাঅপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে। দেশে মোট অভ্যন্তরীন ঋণে কৃষি ঋণের অংশ ১১.৯৬%মাত্র।১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গৃহীত সোসিও ইকোনমিক জরিপ মতে, অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণের অংশ ছিল ৯৩.৩১%। ১৯৬০ সালের পাকিস্থান কৃষিশুমারী অনুযায়ী যার পরিমান ছিল ৯০%। ১৯৬৯ সালের কৃষি ঋণ কমিটির প্রতিবেদনমতে যা ৮৪.১৪% ১৮
এবং ১৯৭৮ সালে বিআইডিএস এর সমীক্ষা অনুযায়ী ৮৯.৭৬%।উপস্থাপিত তথ্যসমূহ লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকেগ্রাম্য ঋণ প্রাপ্তি ১০-১১% এর মধ্যেই সীমিত।
ব্যাংক ও এনজিও থেকে ৩৬% এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ৭৪% ঋণ গ্রহন করেছে।এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যμম বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকেঋণ প্রাপ্তি হ্রাস পেয়েছে। ( আহমেদ) তবে এনজিও গুলোর চরিত্র ও প্রকৃতিমহাজনদের মতোই। মহাজনের আকার আকৃতি পাল্টাচ্ছে কিন্তু চরিত্র একই রকম।অধ্যাপক সোলায়মান মন্ডল এর মতে, গ্রামীন ব্যাংক গ্রামীন দারিদ্রের মাত্র ২%লোককে ঋণের সুবিধা প্রদান করতে পেরেছে। দেশে ১৫০০ ও বেশি এনজিও আছে।সবগুলো এনজিও মিলে দেশের ১০-২০% ভূমিহীনকে ঋণ প্রদান করেছে মাত্র।
বিআইডিএস এর গবেষনা মতে, মোট ঋণের ৫২% মহাজন, ১৬.৩% আতড়বীয়স্বজন, ২.২৯%ব্যবসায়ী, ৩.১৩% বন্ধুবান্ধব, ১২% জোতদার, ১.১৯% প্রতিবেশী এবং ১১.৪০%প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে সরবরাহ করা হয়। ২০০২ সালে এনজিও সমূহ ৪৯.৪০ মিলিয়নটাকা এবং ব্যাংকসমূহ ২৯.৫৫% বিলিয়ন টাকা কৃষি ঋণ বিতরন করে। বেসরকারীব্যাংকসমূহ গ্রামীন খাতে ঋণ এখনও তেমন অংশগ্রহন করছে না। এগুলো ২০০২ সালেমাত্র ০.৩৬ বিলিয়ন টাকা ঋণ বিতরন করে।
গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উনড়বয়নে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকাঃ
এমনিতেই আমাদের দেশ গ্রাম ও কৃষি নির্ভর এবং জনসংখ্যার ৭৭% এখনও গ্রামেবসবাস করে। গ্রামীণ মহিলাদের সার্বিক উনড়বয়নে ক্ষুদ্র ঋণপ্রভাবপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এদেশের ঋণ ব্যবস্থায় যেমনি গরীবেরপ্রবেশাধিকার নেই তেমনি আবার সুদভিত্তিক ঋন ব্যবস্থায় রয়েছে নানা ধরনেরশোষন ও জুলুম। অন্যদিকে সুদভিত্তিক ঋন ব্যবস্থায় সমাজে ব্যাপক বৈষম্যসৃষ্টি হয়। এছাড়াও ঋণ বিতরনে শহর ও গ্রামের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক বৈষম্য।প্রাতিষ্ঠানিক ঋনের ৮০-৯০% ভাগ পায় শহরের পুঁজিপতি এবং অধিকাংশ জনগণ মাত্রবাকী ১০% পায়। গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষকদেরকে এখনও মহাজনের উপর নির্ভর করতে হয়।এনজিওরা দারিদ্র বিমোচনে বহু প্রশংসা পেলেও তারা মাত্র ১০-২০% ভূমিহীনকেঋণ প্রদান করতে পেরেছে এবং গ্রামের মহাজনদের তুলনায় এনজিও গুলোর শোষনও কমনয়। এরা মূলত নব্য মহাজন। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর সুদ নামক ধ্বংসাতড়বক ব্যাধিরমাধ্যমে সমাজের পুঁজি, পুঁিজপতিদের পকেটেই চলে যাচ্ছে। নিমেড়বপল্লী ঋনের ভূমিকা আলোচনা করা হলো-
১. মূলধন গঠন:
পুঁিজবাদী ব্যবস্থার অর্থের প্রভাব খুবই বেশী। ঋণ সাধারনত নগদ অর্থেই বেশীপ্রদান করা হয়। উনড়বয়নশীল ও অনুনড়বত দেশসমূহের অর্থনীতি দারিদ্রের দুষ্টচμে আবদ্ধ। আর এই দুষ্ট চক্র ভাঙ্গার জন্যই পুঁিজর প্রয়োজন। কেননা ঋণসম্প্রসারিত হলেই মূলধন গঠন বৃদ্ধি পায়।
২. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি:
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। অধিকাংশ লোকই কৃষিতে নিয়োজিত। শস্য উৎপাদন, মৎস্য চাষ, পশুপালন, হাঁসমুরগী, বৃক্ষরোপন ইত্যাদি কৃষির উপখাতসমূহেরউনড়বয়নের জন্য ঋণের প্রয়োজন। ১৯
৩. আয় বৃদ্ধি:
ঋণ জনগনের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক। অকৃষি কাজেও কৃষকরা ঋণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয়মূলধন সংগ্রহ করে। গ্রামীণ জনগণ নানা রকম আয় সৃষ্টিকারী কর্মকান্ডে নিয়োজিতহতে পারে। গ্রামের গরীব মানুষের আয় নি¤ড়ববলে তাদের সঞ্চয় খুবই কম। যার ফলেতাদের হাতে বিনিয়াগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ থাকে না।
৪. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি:
বিপুল পরিমানে ছদ্ম বেকারত্ব ও মৌসুমী বেকারত্ব পল্লী এলাকার দেখা যায়।এছাড়াও স্বাভাবিক বেকারত্বও রয়েছে। পল্লী অঞ্চলের এই গরীব বেকার জনগনেরজন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টিতে ঋন কর্মসূচি বিরাট অবদান রাখতে পারে।
৫. শহর ও গ্রামের বৈষম্য হ্রাস:
দেশের সামগ্রিক উনড়বয়নে গ্রামের দারিদ্র জনগনের অবদান বেশি থাকলেও উনড়বয়নেরসুফল তারা কখনোই তেমন ভোগ করতে পারেনা বা তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়। সমাজেরমুষ্টিমেয় লোকেরা সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে। তবে ঋণের বাজারে যদি গরীবদেরপ্রবেশের সুযোগ দিলে এই বৈষম্য হ্রাস পাবে।
৬. কুটির শিল্পের উনড়বয়ন:
গ্রামীন জনগনের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে কুটির শিল্প। বিপুল পরিমান জনসংখ্যাকুটির শিল্পে নিয়োজিত। কুটির শিল্পে যথেষ্ট ঋণ সুবিধা সম্প্রসারিত হলেকর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদন-প্রযুক্তিরও উনড়বয়ন হবে।
৭. দারিদ্র বিমোচন:
দেশের জনসংখ্যা ৫০% দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। পল্লী এলাকার ৫০% লোকদারিদ্রসীমার নীচে রয়েছে। ঋণ সুবিধা সম্প্রসারিত হলে দারিদ্র ভূমিহীন কৃষিশ্রমিকদের ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য অকৃষি কাজে নিয়োজিত হবারসুযোগ বৃদ্ধি পাবে। ফলে আয় বৃদ্ধি পেয়ে দারিদ্র হ্রাস পাবে।
ক্ষুদ্র ঋণের সমস্যা:
ঋণের অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসের প্রাধান্য
অতিরিক্ত সুদের কারনে শোষণ
মোট ঋণের পরিমান কম
জামিন রাখার মত সম্পদের অভাব
জটিল ঋণ দান পদ্ধতি
ঋণের অর্থ অপব্যবহার
প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের পরিমান কম
অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের পরিমান বেশি
প্রাতিষ্ঠানিক ঋণে কৃষকদের আগ্রহ কম
২০
পঞ্চম অধ্যায়
উপসংহার
৫.১ প্রাপ্ত ফলাফলের সারাংশঃ
গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উনড়বয়নের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা খুবই প্রভাবপূর্ন। ঋণ প্রদানেরজন্য পুঁিজর সরবরাহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের পল্লীর ভূমিহীন ওপ্রান্তিক চাষী এবং গরীব মানুষরা এখনও প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুযোগ-সুবিধাথেকে বঞ্চিত। বর্তমানে প্রায় দেড় হাজারের কাছাকাছি এনজিও ক্ষুদ্র ঋণকার্যμম চালু করেছে। কিন্তু এদের কার্যμম সম্প্রসারিত হলেও দেশেরভূমিহীনদের মাত্র ১০-১২% তাদের ঋণের সুযোগ পেয়েছে। পূর্বে মহাজনেরা ক্ষুদ্র ঋণের অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করত। বিপুল সংখ্যক এনজিও গড়ে উঠলেও মহাজনেরভূমিকা এখনও তেমন একটা হ্রাস পায়নি। মহাজনের সুদের হার বেশী এবং এনজিওদেরওএকেবারে কম নয়। এনজিওরা মূলত মহাজনের স্থান দখল করতে চাচ্ছে। এনজিও ওমহাজনের শোষন থেকে বাঁচতে হলে সুদবিহীন এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানেরসম্প্রসারন প্রয়োজন। ব্যাংক, মহাজন, জোতদার, এনজিও সবাই মিলে পল্লীকেশোষনের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন ।সেবামূলক মনেবৃত্তি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও পল্লী উনড়বয়ন কখনইসম্ভব হবে না।
পল্লী জনগনের আর্থসামাজিক অবস্থার উনড়বয়নের জন্য যে ঋণ প্রদান করা হয় তাকেক্ষুদ্র ঋণ বলে। পল্লীর কৃষি, মৎস্য চাষ, কুটির শিল্প, পশুপালন, ব্যবসা-বানিজ্য এবং কৃষি পণ্যের সংরক্ষন ও বাজারজাতকরনের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের প্রয়োজন। বিভিনড়ব প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ক্ষুদ্র ঋণ সরবরাহকরা হয়। বর্তমানে বহুসংখ্যক এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যμম গ্রহন করেছে।এছাড়াও স্থানীয় সরকার, ত্রান ও দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা, সমাজকল্যাণ ও মহিলাবিষয়ক ও যুব উনড়বয়ন মন্ত্রণালয় থেকেও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হয়। ২১
৫.২ সুপারিশমালাঃ
গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উনড়বয়নে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা বেশ প্রশড়ববিদ্ধ। গ্রামীণ মহিলাদের আথ-সামাজিক উনড়বয়নে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা আরো বৃদ্ধির জন্য নি¤েড়বাক্ত সুপারিশগুলো প্রদান করা হলো।
অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে
প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুযোগ বাড়াতে হবে
গ্রাম্য মহাজনদের সুদের হার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ
ঋণ দান পদ্ধতির জটিলতার হ্রাস
ঋণের সদ্বব্যবহার নিশ্চিতকরণ
ঋণের তদারকী বাড়াতে হবে
অনুৎপাদনশীল কাজে ঋণের ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহি করতে হবে
ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য বিশেষ ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণ
ঋণের বহুসংখ্যক কিস্তি থাকতে হবে
সুদমুক্ত সমবায় সমিতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা
সরকারী ও বেসরকারী ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির জন্য নি¤েড়বকিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলো:-
ঋণ কর্মসূচিতে গরীবদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহিৃত করতে হবে এবং সবচেয়ে গরীবদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
গরীবদের জন্য স্বতন্ত্র ঋণ কর্মসূচিসহ বাস্তবায়নের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থাপনা কাঠামো তৈরী করতে হবে।
পাঁচজনের কিংবা অনুরুপ ছোট ছোট গ্রুপে গরীবদের সংগঠিত করতে হবে।
ছোট ছোট কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।
ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়োজিত কর্মীদেরকে সচেতন ও দায়িত্ববান হতে হবে।
প্রতিটি ঋণ কর্মসূচিতে সঞ্চয় উপকর্মসূচি থাকতে হবে এবং বীমা কর্মসূচিও চালু করতে হবে।
বর্তমান সমবায় আইন সংস্কার করে সমবায়ের উনড়বতি করতে হবে।
ঋণে নিয়োজিত কর্মীদের বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সুদের হার হ্রাস করতে হবে এবং সুদবিহীন ঋণ কার্যμম বা উৎপাদনমুখী সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
যে সমস্ত গরীবদের দৈনিক মজুরীতে নিয়োজিত হবার সুযোগ কম তাদের জন্য ঋণ পরিশোধের কিস্তি বাস্তবভিত্তিক হতে হবে।
ঋণ পরিশোধের সময় যথেষ্ট সময় থাকলে ঋণ গ্রহনকারীদের নৈরাশ্য হ্রাস পাবে।
ঋণ প্রদানের সময় শুধু পুরুষ কিংবা শুধু মহিলা গ্রুপ তৈরী না করে, স্বামী-স্ত্রীকে গ্রুপের মধ্যে নিয়ে আসলে পারিবারিক শান্তি বিঘিড়বত হবে না।কারন স্বামী-স্ত্রীর যৌথ প্রচেষ্টায়ই প্রকৃত উনড়বয়ন লাভ করা সম্ভব।
২২
৫.৩ শেষ কথাঃ
বিশ্বের বিভিনড়ব দেশে যেভাবেদুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তার লক্ষ্যে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী উনড়বয়নসংস্থা বা ‘ক্ষুদ্র ঋণের’র জন্ম হয়েছে, সেভাবে বাংলাদেশেও ১৯৭১ সালের পরযুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্যকিছু সংখ্যক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে নানান উনড়বয়নকার্যμম বাস্তবায়ন শুরু করেন। বিশ্বে অবশ্য আনুষ্ঠানিক অবয়বে প্রকাশিত এধরনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সারা বিশ্বেই মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেবিকশিত হতে শুরু করে। উপমহাদেশে একদা মুসলিমদের জন্য ওয়াকফ্ আইন এবংহিন্দুদের জন্য দেবোত্তর আইনে যে প্রাতিষ্ঠানিক স্বেচ্ছাসেবী কার্যμমশুরু হয়েছিল, তারই হাত ধরে আজকের ‘ক্ষুদ্র ঋণের’ কার্যμমের বিকাশ।
প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলো তাদের কাজ ত্রাণ ওপুণর্বাসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেও, পরবর্তীকালে দেশের অবকাঠামো উনড়বয়ন ওকৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে তাদেরকর্ম পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। এদেশের স্বেচ্ছাসেবী উনড়বয়নকর্মীরা বুঝতেপেরেছিলেন যে, সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশের পাহাড়সম সমস্যা সরকারের একারপক্ষে সমাধান করা কঠিন। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করলে, অল্প সময়েরমধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে স্বপেড়বর “সোনার বাংলা” প্রতিষ্ঠাকরা সম্ভব। সেদিনের সেই ক্ষুদ্র উদ্যোগই পরবর্তীকালে বেসরকারি উনড়বয়নসংস্থা বা ক্ষুদ্র ঋণের-তে রূপ লাভ করে, যা আজ একটি প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় বৃহৎ উনড়বয়নসেক্টর হিসেবে সর্বজন-স্বীকৃত।
এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে সμিয় বেসরকারিউনড়বয়ন সংস্থার বা ক্ষুদ্র ঋণের’র সংখ্যা দুই-আড়াই হাজারের মতো হবে। নিবন্ধিত এবংঅনিবন্ধিত হাজার হাজার সংগঠন সারা বাংলাদেশে বিস্তৃত থাকলেও দাতারা সাধারণতক্ষুদ্র ঋণ বলতে সরকারের ‘ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক ব্যুরো’ কর্তৃক নিবন্ধিত সংস্থা সমূহকেবোঝান।
সাধারণত সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়কঅধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, সাব-রেজিস্ট্রার, যুবউনড়বয়ন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ইত্যাদিসরকারি সংস্থা থেকে নিবন্ধন নিয়ে দেশে অনেকেই কাজ করছেন। অনেকে আবারনিবন্ধন না নিয়েও কাজ করছেন। দীর্ঘ ৪ দশকের ক্ষুদ্র ঋণের কার্যμম জাতীয় উনড়বয়নেরলক্ষ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রামীণ উদ্যোগগুলোকে টেকসই করার জন্য বিশেষগুরুত্ব আরোপ করেছে। এরমধ্যে, জাতীয় জীবনে নারী-পুরুষের সম-অংশগ্রহণের হারবৃদ্ধি ও দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরিতে অবদান রাখা ক্ষুদ্র ঋণের-দের মূল ফোকাসে চলেআসে।
বেসরকারি উনড়বয়ন সংস্থা সমূহের এসব উদ্যোগজাতীয় উনড়বয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি লাভ করেছে। দেশেরক্ষুদ্র ঋণের কর্মকা-ের একটি বড় দুর্বল দিক হলো— ক্ষুদ্র ঋণের সেক্টরের স্বচ্ছতা ওজবাবদিহিতা। দেশ ব্যাপী ক্ষুদ্র ঋণের’র কর্মকা- মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণ ও ক্ষেত্রবিশেষে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে থাকে ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়ক ব্যুরো। তবে, ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়কব্যুরো শুধুমাত্র বৈদেশিক অনুদান প্রাপ্ত বেসরকারি উনড়বয়ন সংস্থা সমূহেরকার্যμম মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণ ও তদারকি করে থাকে। এর বাইরে স্থানীয় সম্পদআহরণের মাধ্যমে অনেক ক্ষুদ্র ঋণের কাজ করে থাকে। এসব সংস্থা সাধারণত তাদেরকার্যμমের জন্য নিবন্ধন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ, সংশিষ্ট দাতা সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসনের নিকট দায়বদ্ধ এবং তারা তাদের কার্যμম মনিটরিং করেথাকে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণের কার্যμম সমন্বয় ও মনিটরিংকরলেও তারা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী রুটিন কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণের-দের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হ’লে সুফল পাওয়াযেতে পারে। ২৩
গ্রন্থপুঞ্জি লেখকের নাম গ্রন্থের নাম প্রকাশনীর নাম স্থান সাল
হুসাইন ড. ইকবাল গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান লেখাপড়া ঢাকা জানুয়ারী, ২০০৫ ইং
ফাহমিদা বিন তেহাসিব বাংলাদেশের উনড়বয়ন:
ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকা সবংভরঃ.ড়ৎম ঢাকা ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ইং
আলামিনমো ক্ষুদ্র ঋণ কি? নধহমষধধৎঃরপষব.ড়ৎম ঢাকা ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ইং
বনি আহমেদ তানজিল দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ: ভূমিকা, বিতর্ক ও বিকল্প ভাবনা অর্থনীতি বিভাগ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ঢাকা
Comments
Post a Comment